স্পোর্টস ডেস্ক: স্প্যানিশ কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরার মুখে হাসি কমই দেখা যায়। ম্যাচের পর তার মুখ দেখে আন্দাজ করার উপায় থাকে না জিতেছেন, ড্র করেছেন নাকি হেরেছেন। গতকাল (মঙ্গলবার) রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় দেখা গেলো অন্যরকম এক ক্যাবরেরাকে। মুখে স্মিত হাসি, বাড়িয়ে দেওয়া হাতে মেলাচ্ছেন হাত, অভিনন্দনের জবাব দিচ্ছেন। এক কথায় গণমাধ্যমের সামনে ফুরফুরে মেজাজে রাকিব-ফাহিমদের কোচ।
হবেন না কেন? বছরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ জেতার পর কার-ই বা উড়তে ইচ্ছে না করে। পারলে হয়তো সেটাই তিনি করতেন। আগের দিন অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া মালদ্বীপের বিপক্ষে ম্যাচটিকে বলেছিলেন ‘ম্যাচ অব দ্য ইয়ার’। কেন বলেছিলেন দেশের ফুটবলের খোঁজখবর যারা রাখেন তাদের বুঝতে অসুবিধা হয়নি। এ ম্যাচ জিততে না পারলে বাংলাদেশের ফুটবল বিশাল যে ধাক্কা খেতো তা কাটিয়ে উঠতে হয়তো অনেক কাঠখড় পোড়াতে হতো। যেমনটি হয়েছিল ২০১৬ সালে ভুটানের কাছে হেরে।
ম্যাচের পর কোচ সে কথাটাই বলেছেন, বাংলাদেশের ফুটবল উন্নতির যে পথে হাটছে তা থমকে যেতো যদি এ ম্যাচ জিততে না পারতাম। আমরা অনেক লড়াই করেছি, বিগত কয়েক মাস আমরা যে একটা সঠিক ট্র্যাকে ছিলাম তার ফল এই জয়।
ক্যাবরেরার সামনে মালদ্বীপের বিপক্ষে এ ম্যাচ দুটি আরও বেশি চ্যালেঞ্জিং করে তুলেছিলেন তারই একাদশে নিয়মিত হয়ে যাওয়া তিন খেলোয়াড় গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকো, ডিফেন্ডার তপু বর্মন ও অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার শেখ মোরসালিন। মদকাণ্ডে জাতীয় দল থেকে ছিটকে পড়েন তারা। শৃঙ্খলার প্রশ্নে কোনো ছাড় দেননি কোচ। নিষেধাজ্ঞা মুক্ত হওয়া মোরসালিনকে খেলানোর চতুর্মুখী চাপকেও পাত্তা দেননি। অধিনায়কের চোখের ‘ম্যাচ অব দ্য ইয়ার’ এবং নিজের চ্যালেঞ্জ জিতে ক্যাবরেরা যেন ভুবনের সবচেয়ে সুখী মানুষ। যাদের ওপর ভরসা রেখে যুদ্ধজয়ের লড়াইয়ে নেমেছিলেন ক্যাবরেরা, সেই মিতুল মারমা, ফাহিমরা দুহাত ভরে দিয়েছেন তাকে।
আজ (বুধবার) ঢাকায় আসছেন ব্রাজিলের ২০০২ বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম নায়ক রোনালদিনহো। তার আগমন নিয়ে কথা বলতে মঙ্গলবার দুপুরে বাফুফে সভাপতি কাজী মো. সালাউদ্দিনকে ফোন করা হলে জবাবে তিনি বলেছিলেন, আমার মাথায় অন্য কিছুই নেই, সব ভাবনা বিকেলের ম্যাচ নিয়ে। ম্যাচ শেষ না হওয়ার আগে অন্য কোনো বিষয়ে কথা বলবো না।
এটা এমন এক ম্যাচ ছিল যে, জেতার জন্য কোটি টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছিলেন বাফুফে সভাপতি। জামাল ভূঁইয়ারা সে পুরস্কার নিশ্চিত করেছেন। তবে তাদের জন্য অর্থের চেয়েও বড় পুরস্কার দেশের ফুটবলকে সঠিক ট্র্যাকে রাখতে পারা। বাফুফে সভাপতিও ম্যাচের পর বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনা ছেড়েছেন সুখী এক মানুষ হিসেবে। গত সাফের সেমিফাইনালে ওঠায় বাফুফে সভাপতি ফুটবলারদের দিয়েছেন অর্ধকোটি টাকারও বেশি পুরস্কার। এবার দেবেন এক কোটি।
প্রায় ৭ হাজার দর্শক রুদ্ধশ্বাস ম্যাচটি দেখেছে গ্যালারিতে বসে। শেষ বাঁশির পর তাদের বাঁধভাঙা উল্লাস প্রমাণ করেছে ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা। তারা নিশ্চয়ই কামনা করেছেন মাঠের এই আনন্দের দিন বারবার আসুক। তা ফুটবল ঘিরে হোক, বা অন্য কোনো খেলায়।
ক্যাবরেরা বলেছেন একটা লড়াই জেতায় খুলে গেছে আরো বড় লড়াইয়ের দরজা। ঠিকই বলেছেন। অস্ট্রেলিয়া, লেবানন ও ফিলিস্তিনের বিপক্ষে ৬ ম্যাচ। বিশাল প্রাপ্তি।
গত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নেওয়া দুই শক্তিশালী অতিথি দল লেবানন ও কুয়েতের বিপক্ষে চোখে চোখ রেখে খেলেছিল বাংলাদেশ। সেপ্টেম্বরে ঢাকায় শক্তিশালী আফগানিস্তানের বিপক্ষেও টক্কর দিয়েছিল ফিফা ফ্রেন্ডলি দুই ম্যাচে। বড় দলের বিপক্ষে বুক চিতিয়ে খেলার সাহসের যোগানদাতা কোচ ক্যাবরেরা।
একটি ম্যাচ জিতে আগামী ৬ মাস ম্যাচের মধ্যে থাকার বন্দোবস্ত করার পর চওড়া হাসি-তো ক্যাবরেরার মুখেই মানায়। অস্ট্রেলিয়া, লেবানন ও ফিলিস্তিন অচেনা প্রতিপক্ষ নয় বাংলাদেশের। অভিজ্ঞতা আছে লেবাননকে হারানোরও। আগামী ম্যাচগুলোতেও বাংলাদেশ লড়াকু ফুটবল খেলবে, সবার প্রত্যাশা সেটাই।